আতংক নয় সচেতনতা জরুরী – সঠিক কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসাই অনিয়মিত মাসিকের সমাধান

ঢাকা মেডিকেল কলেজের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাহানারা চৌধুরী জানান, অনিয়মিত পিরিয়ড নারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর মতে, প্রতি তিনজন নারীর একজন জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এই সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে এর জটিলতা আরো বাড়তে পারে।

অনিয়মিত পিরিয়ড কী?

নারীর মাসিক চক্র সাধারণত ২৩ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ঘটে। তবে এর চক্রে নিয়মিত বিরতি না থাকলে, অর্থাৎ ২৩ দিনের আগেই পিরিয়ড হওয়া কিংবা ৩৫ দিনের পরেও পিরিয়ড না হওয়া, একে অনিয়মিত পিরিয়ড বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত সময়ের বাইরে মাসে একাধিকবার পিরিয়ড হওয়া, দুই পিরিয়ডের মাঝে অনিয়মিত ব্লিডিং হওয়া এবং পিরিয়ডের সময় অস্বাভাবিকভাবে রক্তপাত হওয়া—সবই অনিয়মিত পিরিয়ডের লক্ষণ।

কেন হয় অনিয়মিত পিরিয়ড?

অনিয়মিত পিরিয়ডের পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিশোরী বয়সে মস্তিষ্কের হরমোনাল তারতম্য কিংবা মেনোপজের আগে বা পরে হরমোনের পরিবর্তন এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। এ ছাড়া পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস), জরায়ুর টিউমার বা ফাইব্রয়েড, এবং রক্তের জমাট বাঁধার অসুবিধা থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে।

প্রজনন বয়সের নারীদের গর্ভপাত, সন্তান জন্মদানের পরের পর্যায়, কিংবা সন্তানকে স্তন্যদানের সময় অনিয়মিত পিরিয়ড দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই অবস্থাগুলোতে চিকিৎসা প্রয়োজন এবং উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে জটিলতা বাড়তে পারে।

ঝুঁকি এবং প্রভাব

অনিয়মিত পিরিয়ড নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। এর কারণে রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়া হতে পারে, যা দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট এবং কর্মক্ষমতা হ্রাস করে। এছাড়া অতিরিক্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের কারণে ত্বকে সংক্রমণ এবং জীবাণুজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মিত পিরিয়ডের সমস্যা অবহেলা করা হলে জরায়ুর পলিপ বা ফাইব্রয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, পিসিওএস থাকলে ভবিষ্যতে সন্তান ধারণে অসুবিধা এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে।

চিকিৎসা কী?

অনিয়মিত পিরিয়ডের চিকিৎসায় রক্তশূন্যতা দূর করার জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্ট, প্রোজেস্টেরন হরমোন থেরাপি, এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল দেওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসা নির্ভর করবে রোগীর নির্দিষ্ট সমস্যার ওপর। যদি জরায়ুতে পলিপ বা টিউমার থাকে, সেগুলো অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে। পিসিওএস থাকলে হরমোনাল থেরাপি প্রয়োজন হয়, এবং জরায়ু ক্যান্সার হলে তার জন্য যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জীবনধারায় পরিবর্তন আনা জরুরি। ওজন নিয়ন্ত্রণ, সুষম খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম এবং জাঙ্ক ফুড পরিহার করে এই সমস্যা অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য জটিলতা এড়াতে অনিয়মিত পিরিয়ডে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Source: The Daily Star

Leave a Reply