সংসার নাকি কর্মজীবন? বর্তমান সময়ের বাংলাদেশি নারীদের চাওয়া-পাওয়া
শিক্ষিত নারী সমাজের সিদ্ধান্তে টানাপড়েন পরে তাদের শিক্ষা জীবনের শেষ দিকে এসে। একদিকে বিয়ের জন্য পরিবারের চাপ অন্যদিকে পড়াশোনা শেষে চাকরির ধাপ। প্রত্যেকটি শিক্ষিত নারীই শিক্ষা জীবনের সমাপ্তিকে পরিপূর্ণ করতে চান চাকরির সাফল্য দিয়ে। তবে পরিবার-সমাজ-পারিপার্শ্বিক চাপে নারীর মধ্যে তৈরি হয় মানসিক ও বহির্জাগতিক দ্বন্দ্ব।
আগের একটা সময় ছিল যখন নারীর জীবন সম্পর্কে ধারনার রূপরেখা ছিলো পুতুল খেলতে খেলতে শ্বশুরবাড়ি যাওয়া। এরপর নিজের জীবনেই পুতুল খেলার মত সংসার করা। বাবা-মায়ের আদরের ৮/৯ বছরের কন্যাকে পুতুল খেলতে পাঠানো হতো শ্বশুরবাড়ি আর সেখান থেকেই নিজের জীবনের হাতেখড়ি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি গল্প মনে হলেও ঠিক এমন টাই ঘটতো। সেদিনের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার, সংস্কারবোধ ইত্যাদির কারণে নারীদের অগ্রযাত্রা থমকে ছিল। কিন্তু বদলে গিয়েছে দিন। ক্রমশ আরো বদলাচ্ছে। আজ আর পুতুল খেলতে খেলতে নারীরা শ্বশুরবাড়ি যায় না।
এখন আর কোন নারীই তাদের জীবনকে পুতুল খেলা হিসেবে নেয় না। প্রত্যেক নারীর স্বপ্ন হয় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। এবং সেই শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা দেয়া। নারী তাদের জীবন সম্পর্কে দিনকে দিন সচেতন হচ্ছে। শিক্ষার মাধ্যমেই তাদের জীবনে আসছে এই সচেতনতা। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি তারা চাকরির ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে পুরুষের তুলনায়। ফলে বিয়ে আর ক্যারিয়ার নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় মনে। এ বিষয়ে তরুণসমাজ থেকে বিশ্লেষণধর্মী ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই রকমের মতামতই পাওয়া যায়।
স্নাতকোত্তর একজন নারীর শিক্ষা জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার গণ্ডি পেরিয়ে ভাবেন ক্যারিয়ার নিয়ে। কারণ পরিবারের প্রত্যাশা থাকে মেয়েটি চাকরি করবে। অন্যদিকে ‘বয়স বেড়ে যাচ্ছে, মেয়ে বুড়ি হয়ে যাচ্ছে’ সমাজের এমন প্রচলিত কথায় ক্যারিয়ার ভাবনায় পড়ে দুশ্চিন্তার ছাপ। এমন পরিস্থিতিতে নারীটির জীবনে কড়া নাড়ে দ্বন্দ্বের দৈবীরূপি আত্মা । এত প্রত্যাশার ক্যারিয়ারটি গড়া নিয়ে থাকে হাজারো প্রশ্ন।
তবে এমন অনেক নারীর জীবনে আসা এই দ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ করে সেখান থেকেই শিক্ষা নিতে হবে। শিখতে হবে যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি কীভাবে জয় করতে হয়। জীবনের ক্ষেত্রে সচেতন হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়াই শ্রেয় । বিয়ে আগে করবেন, নাকি ক্যারিয়ারটাকে বিয়ের আগেই খুব ভালভাবে গুছিয়ে নেবেন, সে সম্পর্কে ভাবনাটা সবার একরকম নয়। যদিও একটা বিষয়ে মিল আছে— প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত একজন নারী সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চান। তবে বিয়েটিকে সময়ের ধারাবাহিকতার কোন অবস্থানে রাখবেন, এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।
অনেক নারী চান তাদের শিক্ষা জীবনের পরপরই বিয়ের পর্বটি চুকিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে, যাতে পরে পারিবারিক ও সামাজিক চাপে না পরতে হয়৷ তবে বিপরীতে দেখা যায়, অনেকে শিক্ষা জীবনের শেষে বিয়ের আগেই পরিপূর্ণভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। তাদের আশংকা থাকে ক্যারিয়ার নিয়ে। যেন বিয়ের কবলে ক্যারিয়ার বলি না হয়। এই দুই ধরনের সিদ্ধান্তের উভয়টিই একজন নারীর মনোবল এবং পরিস্থিতি সামাল দেবার যোগ্যতার উপর নির্ভর করে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত এবং দৃঢ় আত্মবিশ্বাস নারীকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী নারী যেকোনো বাধাকেই সহজে জয় করতে পারে।
তবে এ পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষিত নারীর প্রথমত,তিনি কি করবেন তা নিজেরই সিদ্ধান্ত নেয়া। নিজের মনোবল অটুট রাখা। একটি সঠিক সিদ্ধান্তের পেছনে শক্ত যুক্তি দাঁড় করানো কাজের ক্ষেত্রে মঙ্গলজনক। এটি পরবর্তীতে তাকে হতাশ করবে না।
যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিকে বাধা হিসেবে নিয়ে পিছিয়ে না এসে এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় নিয়ে। বিয়ের আগে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে পরিবারের সাথে আলোচনা করে তাদেরকে নিজের লক্ষ্যটি চমত্কারভাবে উপস্থাপন করা যায়, যাতে তারাও সহযোগিতামূলক জায়গায় দাঁড়াতে পারেন। বিয়ের পরে নিজেকে গড়ে তুলতে চাইলে সবার সাথে বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিজের প্রত্যয়ী অবস্থানটিকে জিইয়ে রাখতে হবে।
মানুষের সবচেয়ে আপন জায়গা হলো তার বাবা-মা কিংবা স্বামী। সবারই উচিত একইসাথে সহমর্মিতা সাথে এবং যুক্তি দিয়ে নারীর ইচ্ছাকে, লক্ষ্যকে উপলব্ধি করা এবং সম্মানের চোখে দেখা। এভাবেই একজন নারী তার সঠিক সিদ্ধান্ত আর পরিবারের সহযোগিতায় নিজের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সুন্দর একটি জীবন কাটাতে পারে। ক্যারিয়ার আর বিয়ে কখনোই একে অন্যের বাধা হতে পারে না যদি আত্মবিশ্বাসী হয়ে নিজের জীবন সাজানো যায়। শক্ত মনোবল আর দৃঢ় সংকল্পই এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর।