পর্দা, স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার: নার্গিস মোহাম্মদির অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত, নার্গিস মোহাম্মদি, একজন বিখ্যাত ইরানী মানবাধিকার কর্মী, তার স্থানীয়বাসীদের উপর অন্যায়ের প্রতিবাদে একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইরানের নারীদের অধিকারে আত্মত্যাগের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার এক মাস পরই তিনি অনশন শুরু করেছেন।
৫১ বছর বয়সে তিনি শুধুমাত্র নিজের এবং তার সাথে থাকা সাজাপ্রাপ্তদের কারাগারে চিকিৎসা প্রদান না করায় ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন না এর সাথে বাধ্যতামূলক হিজাব আইনের বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। তার এই পদক্ষেপ ন্যায়ের পক্ষে একটি সাহসী এবং শক্তিশালী বার্তা।
মোহাম্মদির হৃদরোগ এবং ফুস্ফুসের জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন, কিন্তু একজন প্রসিকিউটর তার হাসপাতালে স্থানান্তর আটকে দিয়েছেন। তার পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, প্রসিকিউটরের তার বিরুদ্ধে যাওয়ার কারন হতে পারে মোহাম্মদির মাথায় ওড়না পড়তে অস্বীকৃতি জানানো। এই ঘটনা নিয়ে বিশ্বব্যাপী নিন্দা এবং অভিযোগ উঠে এসেছে, যার মধ্যে নরওয়ের নোবেল কমিটির চেয়ারউম্যান বোড়ীত গভীর উদবেগ প্রকাশ করেছেন।
বেরিট রাইস-এন্ডারসেন বলেছেন, “নারী কারাগারের যে কোনও হাসপাতালে যেতে হলে হিজাব পরিধানের আবশ্যকতা অমানবিক এবং অনৈতিক।” এই কথাগুলোয় এই মানসিকতাই উঠে আসে যে লিংগ এবং ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ভিত্তিতে মৌলিক মানব অধিকার বিঘ্নিত হওয়া উচিত না।
কারাগার কর্মকর্তা এবং বিচারকদের কাছে বারবার আপিল সত্তেও বিশ্বাসযোগ্য কারাগার ডাক্তারের পরামর্শ উপেক্ষা করে প্রসিকিউটর মোহাম্মদির প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেননি। এই অবস্থার প্রতিবাদে ইভিন নামক কারাগারের নারী কারাবন্দীরা তাকে হাস্পাতালে নেয়ার জন্য ২ দিন ২ রাত প্রতিবাদ করে যায়। দু:খজনক ভাবে, তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়, কারণ কারাগার ওয়ার্ডেন ঘোষণা করেছিলেন যে একটি স্কার্ফ বা ওড়না ছাড়া তাকে হাসপাতালে পাঠানো নিষেধ।
নার্গিস মোহাম্মদির কাহিনী ইরানে একটি একক ঘটনা নয়। ২০২২ সালে, “অশালীন” হিজাবের জন্য আটককৃত মহসা আমিনির জেলে মৃত্যুর ঘটনায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেক নারী এবং মেয়েরা হিজাব আইনের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, যা তাদের মৌলিক অধিকারের এবং স্বাধীনভাবে চলার আকুলতারই নিদর্শন।
নরওয়ের নোবেল কমিটির একটি হৃদয়স্পর্শী চিঠিতে, নার্গিস মোহাম্মদি বাদ্ধতামূলক হিজাবকে “সমাজে জোরপূর্বক নিয়ন্ত্রণ এর একটি উপায়” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে ইরানের এই সৈরাচারী ধর্মীয় শাসন প্রণালী সামাজিকভাবে মৌলিক অধিকার দমন করতে সাহায্য করে।
নার্গিস মোহাম্মদির অনশন মানবাধিকারের লড়াইয়ে চিরস্মরনীয় হয়ে থাকছে, বিশেষভাবে ইরানের নারীদের জন্য। তার সাহস এবং দৃঢ়তা নিসশন্দেহে অনেকের মধ্যে ন্যায়, সমতা এবং স্বাধীনতা জন্য লড়াই করে যেতে উৎসাহ দেয় যা অনেক মানুষের জন্য এখনো অধরা।
উৎস: বিবিসি