নারীর স্বাস্থ্যে নতুন দিগন্ত: সিটি ব্যাংক ও ইউএনএফপিএ-এর ‘কমলাফুল ফার্মেসি’ উদ্যোগ

বাংলাদেশে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার (SRHR) খাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসতে সিটি ব্যাংক এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এক ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বে যুক্ত হয়েছে। ‘কমলাফুল ফার্মেসি’ নামক এই উদ্যোগটি শুধু একটি প্রকল্প নয়, বরং এটি দেশের নারী ও কিশোরীদের জন্য নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং মর্যাদাপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য একটি অভিনব সামাজিক প্রয়াস। এই চুক্তিটি প্রমাণ করে যে, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগ তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে। 

এই উদ্যোগটি এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন আমাদের সমাজে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এখনো বহুবিধ বাধা বিরাজমান। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, নারীরা প্রায়শই তাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। সামাজিক ট্যাবু, গোপনীয়তার অভাব এবং বিশেষ করে পুরুষ স্বাস্থ্য প্রদানকারীর কাছে ব্যক্তিগত বিষয় আলোচনায় অস্বস্তি একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। এর ফলে বহু নারী সময়মতো সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হন, যা তাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ও জীবনমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই জটিল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পরিচালিত ‘কমলাফুল’ পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আশাব্যঞ্জক সমাধান খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে। দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, নারী ফার্মাসিস্ট বা ফার্মেসি সহকারীরা নারীদের আস্থা অর্জনে অনেক বেশি সফল, যা নারী সেবাগ্রহীতাদের জন্য একটি নিরাপদ ও খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করে। এই প্রত্যাশিত সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই সিটি ব্যাংক ও ইউএনএফপিএ দেশব্যাপী ‘কমলাফুল ফার্মেসি’ মডেলটি ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এই উদ্যোগের কৌশলটি দ্বিমুখী এবং অত্যন্ত কার্যকর। প্রথমত, এটি তরুণী ও নারীদের ফার্মেসি সহকারী হিসেবে প্রশিক্ষিত করে তাদের জন্য সম্মানজনক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে, যা তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পথে এগিয়ে দিবে। দ্বিতীয়ত, এই ফার্মেসিগুলো শুধুমাত্র ঔষধ বিক্রির কেন্দ্র না হয়ে, নারীর জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় বা ‘সেফ স্পেস’-এ পরিণত হবে। যেখানে তারা মানসম্মত কাউন্সেলিং, সঠিক তথ্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সেবা পাবেন। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবা পণ্য সরবরাহের পাশাপাশি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন, নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি এবং আস্থা তৈরির মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোও সম্পন্ন হবে।

এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে উদ্যোগটি এখন দেশের সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীগুলোর কাছে পৌঁছে যাবে। যার উদ্দেশ্য হলো, যেন কোনো নারী বা কিশোরী ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। সিটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাশরুর আরেফিন মনে করেন, এই বিনিয়োগ নারীর “মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং নেতৃত্বের” বিকাশে সহায়ক হবে। এটি কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার এক অনন্য উদাহরণ তৈরি হবে, যার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে প্রচলিত ভূমিকার বাইরে এসে সামাজিক রূপান্তরে সরাসরি অবদান রাখতে পারে, সে বিষয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। সিটি ব্যাংক ও ইউএনএফপিএ-এর এই সম্মিলিত প্রয়াস বাংলাদেশের জন্য একটি টেকসই উন্নয়নের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করবে, যা নিশ্চিত করবে প্রতিটি নারী ও কিশোরীর প্রাপ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরামর্শ, সেবা, এবং প্রজনন অধিকার ।

 

উংস :

সিটি ব্যাংক এবং ইউএনএফপিএ বাংলাদেশে নারী ও মেয়েদের  ক্ষমতায়নের জন্য অংশীদারিত্বের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। 

Leave a Reply