তরুণদের সুস্বাস্থ্য ও প্রত্যাশা: নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত করতে ৮ দফা প্রস্তাবনা!
নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক দলের কাছে ৮ দফা প্রস্তাবনা; যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, মাসিক স্বাস্থ্যবিধি এবং বৈষম্য বিলোপ আইন পাশের প্রতি গুরুত্বারোপ।
আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণ সমাজের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও প্রত্যাশা অন্তর্ভুক্ত করার জোরালো দাবি উঠেছে। ‘অধিকার এখানেই, এখনই (Right Here, Right Now (RHRN))’ প্রকল্পের আওতায় নাগরিক উদ্যোগের আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় এই আহ্বান জানানো হয়। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও প্রত্যাশা বিষয়ক মতবিনিময়’ শীর্ষক এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প সমন্বয়কারী জয়িতা হোসেন। সভায় দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন এনসিপি নেত্রী সামান্থা শারমিন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাকিয়া শিশির, বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী ড. সাইমুম পারভেজ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির লুনা নূর প্রমুখ।
বাপসার নির্বাহী পরিচালক ড. আলতাফ হোসেন বলেন, যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আইন ও বিধি থাকলেও এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। তিনি বিজ্ঞানসম্মত নীতির আওতায় যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য ও অধিকার (SRHR)-কে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। এছাড়া, মাসিক স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, সামাজিক ট্যাবু বা কুসংস্কারের কারণে অনেক মেয়ে স্কুলে যাওয়া বা পানি পান করা থেকেও বিরত থাকে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নাগরিক সমাজ ও সরকারকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
এনসিপি নেত্রী সামান্থা শারমিন অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে দক্ষ চিকিৎসকদের সম্পৃক্ত করে সমাজে সমতার ভিত্তিতে সচেতনতা তৈরির কথা বলেন তিনি। আমার বাংলাদেশ পার্টির চেয়ারপারসন মজিবুর রহমান ভূঁইয়া (মঞ্জু) মনে করেন, নারীদের কাজের জন্য রাজনৈতিক দলে পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করতে হবে এবং পরিবারে বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা অব্যাহত রাখা জরুরি। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল ও প্রশাসনের ঐক্যের ওপরও তিনি জোর দেন।
সভা শেষে তরুণদের সুস্বাস্থ্য, সমৃদ্ধি ও প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে অন্তর্ভুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ আটটি দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির মধ্যে অন্যতম হলো, CEDAW চুক্তির ধারা ২ এবং ১৬.১ (c)-এর সংরক্ষণ অপসারণ করে নারী-পুরুষের সম-অধিকার নিশ্চিত করা। এছাড়াও, বিবাহিত, অবিবাহিত, লিঙ্গ বৈচিত্র্যময়, প্রান্তিক, সংখ্যালঘু, প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীসহ সকলের জন্য যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সহজলভ্যতা নিশ্চিত করার জন্য ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর অ্যাডোলেসেন্ট হেলথ ২০১৭-২০৩০’ সংশোধন করার দাবি জানানো হয়।
অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে—জাতীয় বাজেটে তরুণদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো, মনো-সামাজিক স্বাস্থ্যকে মূলধারার স্বাস্থ্যসেবার অন্তর্ভুক্ত করা, মাধ্যমিক পর্যায়ে সর্বাঙ্গীন যৌনতা শিক্ষা (Comprehensive Sexuality Education) চালু করা এবং বাল্যবিবাহ ও সাইবার অপরাধসহ সকল প্রকার হয়রানি বন্ধে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখা। সর্বোপরি, যত দ্রুত সম্ভব ‘বৈষম্য বিলোপ আইন – ২০২২’ সংশোধনের মাধ্যমে পাশ করার দাবি জানানো হয়।
উৎস : সময় টিভি, অক্টোবর ২০২৫।
