আট বছরের নেতৃত্বে: নাতালিয়া ক্যানেমের অর্জন ও চ্যালেঞ্জ

ইউএনএফপি-র প্রধান নাতালিয়া ক্যানেম’ সাক্ষাৎকার

জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপি-র প্রধান নাতালিয়া ক্যানেম তার দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল থেকে অবসরে যাচ্ছেন। টানা আট বছর গুরুত্বপূর্ণ এই পদে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পর তিনি দায়িত্ব ছাড়ছেন। তিনি তার এই সময়কালে বৈশ্বিক মহামারি, মতাদর্শগত বিরোধিতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝেও নারী ও কিশোরীদের অধিকার রক্ষা করেছেন। বিদায়ের আগে ইউএন নিউজের মিতা হোসালি’র কাছে তিনি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেছেন তাঁর দায়িত্বকালে ইউএনএফপিএ-র মূল অর্জনগুলো এবং ভবিষ্যতে কিশোরীদের জন্য কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন।

নাতালিয়া ক্যানেম: সংক্ষেপে বললে, ইউএনএফপিএ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকারের ক্ষেত্রে নারী, বিশেষ করে কিশোরীদের অধিকার ও পছন্দকে সমুন্নত রেখেছে। আমরা লাখ লাখ ধাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আমরা এই সময়ে কোটি কোটি ইউনিট জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী সরবরাহ করেছি। আমরা আমাদের সেবা পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতাকে সর্বশেষ পর্যায়ের আধুনিকায়ন করেছি। যার মানে হলো এখন লাইন ছোট হয়েছে, নারীরা নিজেদের বাড়ির কাছেই চিকিৎসা পাচ্ছেন। মানবিক সহায়তার সম্প্রসারণেও ইউএনএফপিএ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। আর চাহিদা এত বেশি যে, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আমরা আরও একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করেছি, সেটি হলো বিশ্ব জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই আলোচনায় ১০ বছরের একটি মেয়ের চোখ দিয়ে বিষয়টি দেখা উচিত। সে কৈশোরে প্রবেশ করছে। সে কি স্কুলে থাকতে পারবে, স্নাতক হয়ে জীবন গড়তে পারবে? নাকি বাল্যবিবাহ, নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতি বা চরম দারিদ্র্যের কারণে তার অধিকার ও পছন্দ সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে?

তাই বলব, এই যাত্রা সত্যিই আমার কাছে খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। যদিও কিছু ভীতিকর মুহূর্ত এসেছে তবে আমি সবসময় মুগ্ধ হই যে, আমার ইউএনএফপিএ-র সহকর্মীরা কত তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি ও বড় হৃদয় নিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন করেছেন। 

মিতা হোসালি: আপনি এক সংকটময় ও অনিশ্চিত সময়ে দায়িত্ব ছাড়ছেন, যখন প্রধান দাতাদের কাছ থেকে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ) বড় অঙ্কের অর্থ আসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সংস্কারের কারণে কর্মী ছাঁটাই করা হচ্ছে। কর্মীদের জন্য আপনার বার্তা কী হবে, যারা মাঠে প্রতিদিন, প্রতি মাসে, প্রতি বছর কাজ করে যাচ্ছেন? এবং বাইরের বিশ্বের জন্যও?

নাতালিয়া ক্যানেম: ইউএনএফপিএ-র কর্মীরা অসাধারণ। আমরা ১৫১টি স্থানে ৫০০০-এর বেশি মানুষ কাজ করি। আমাদের কর্মীরা অনেক ঝড় সামলেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও জটিল, কারণ বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাই যখন আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন ঠিক তখনই সেটি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

আমাদের মহাসচিবও এই বিষয়ে চমৎকার ভূমিকা রেখেছেন। আমি কর্মীদের মনে করিয়ে দিই—আমরা প্রতিদিন সকালে উঠি একটি এজেন্ডা এগিয়ে নিতে, যা মানব উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে, পরিবারকে আরও ঘনিষ্ঠ ও সহানুভূতিশীল করে এবং সবসময় মনে রাখতে সেই ১০ বছরের মেয়েটি কী করবে? বড় হয়ে সে কী সব অর্জন করতে পারবে?

আমাদের অর্থায়ন, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন, সবসময় স্থিতিশীল নয়। তারা যখন দেয়, তখন বড় দাতা হয়; না দিলে আমরা তা টের পাই। তবে আমরা বাজেট ও অর্থের উৎসে বৈচিত্র্য আনতে প্রস্তুত ছিলাম। আমার সময়ে গত বছর আমাদের বাজেট ছিল ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার—যেটি আমাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে এটি আমরা কখনোই স্বাভাবিক ধরে নিই না।

আমি আমার দলকে বলি, আমাদের প্রতিদিন নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। ভুল করলে তা সংশোধন করতে হবে, নতুন বন্ধু খুঁজে বের করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, এখন আমি সেভিলা থেকে এসেছি, যেখানে উন্নয়নের জন্য অর্থায়ন প্রস্তাবটি বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। যদিও ঋণ, নতুন অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অশান্তি নিয়ে অনেক উদ্বেগ রয়েছে, তবুও সেখানে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল আমাদের ব্যাংকিং অংশীদার এবং উদ্ভাবনী অংশীদারদের সাথে খুব ভালোভাবে কাজ করেছে। কেনিয়ায় তারা একটি নতুন উন্নয়ন তহবিল চালু করেছে, যা কিশোরী মেয়েদের স্কুলে যাওয়া চালু রাখতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করে। দুই বছরের পরীক্ষামূলক এই প্রকল্পে তারা তাদের লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।

আমার মনে হয়, যখন আমাদের কর্মসূচি কোন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে, তখন বুদ্ধিমানের মতো কাজ হলো মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়া যে প্রতিটি জীবনই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই অর্থায়ন কমে যাওয়া নারী ও কিশোরীদের উপর ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন, সংঘাত বা অভিবাসনের মতো সংকটে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারাই তাদের স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ হারায়, তারাই নিরাপদে স্কুলে যেতে পারে না। তাই আমি মনে করি, আমাদের সত্য কথা বলতে হবে এবং এমনভাবে বলতে হবে যাতে যাতে সকলের সমর্থন পাওয়া যায়।

মিতা হোসালি: আপনি সংঘাতের কথা বললেন। আমি মনে করতে পারি, আপনার দায়িত্বের শুরুতে আপনি, মহাসচিব ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন এবং রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের জন্য জীবনরক্ষাকারী সেবা নিয়ে কথা বলেছিলেন। এখন, এত বছর পর, আরও অনেক সংঘাত যেমন, ইউক্রেন, সুদান, গাজা এবং আগের কিছু সংঘাত চলমান। এই পরিস্থিতিতে যখন অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যায়, তখন বাস্তব জীবনে এর পরিণতি কী?​​

নাতালিয়া ক্যানেম: আমার মনে হয়, গত দশ বছরে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। যার ফলে নারী ও কিশোরীরা সবসময় অনাহারে থাকে। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও নারী ও কিশোরীরা উপেক্ষিত হয়। তারা সবসময় পরিবারের অন্য সদস্যদেরকে প্রাধান্য দেয়। তাছাড়া, এসব সংকটকালে যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়।

জাতিসংঘের জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে তারা ইউএনএফপিএ এবং আমাদের সব অংশীদারের পাশে থাকে। মানুষ যে পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন, তাদের মর্যাদার পক্ষে দাঁড়ায়। কক্সবাজার বা হাইতির মতো জায়গায়, ইউএনএফপিএ যে ধরনের নিরাপদ স্থান দিতে পারে—সেটি হয়তো কেবল ক্রেয়ন দিয়ে সাজানো একটি তাঁবু। কিন্তু সেটিই সংকটের সময় একজন নারীর প্রয়োজনীয় স্বস্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়।

ইউক্রেনে, আমি মনে করি আমরা যে ধরনের মানসিক পরামর্শ সেবা দিতে পারি, তা বিশাল পরিবর্তন আনবে। যখন আপনার চারপাশের সবকিছু হারিয়ে গেছে, তখন জৈবিক প্রয়োজনগুলো—যা একজন কিশোরীর জন্য বিব্রতকর হতে পারে, যেমন শরণার্থী শিবিরে থাকার সময় মাসিক হওয়া—সেই সময় এগুলো এমনভাবে সরবরাহ করতে হয় যাতে মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। সেই কারণেই আমরা আমাদের শিশুদের জন্য এগুলোকে “মর্যাদা শিবির” বলি। আর এর ভেতরে কী থাকবে, তা ঠিক করে কমিউনিটি। টুথব্রাশ, স্যানিটারি প্যাড, কম্বল, শাল যা-ই হোক, যদি প্রয়োজন হয়, তা আপনাকে সেই চরম প্রয়োজনের অবস্থা থেকে সাময়িক মুক্তি দেয় এবং মনে করিয়ে দেয় যে, আপনি আরেকটি দিনের জন্য লড়াই করে বেঁচে থাকবেন। আর সেটাই জাতিসংঘের কাজ। যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, সেই উজ্জ্বল দিন একদিন এসে পৌঁছাবে।

মিতা হোসালি: অবশ্যই, ইউএনএফপিএ অন্য উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতোই কোন বিষয়ে মূলত ধাপে ধাপে অগ্রগতি অর্জন করে। তেমনই একটি বিষয় নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ (Female Genital Mutilation) নিয়ে বহু বছর ধরে কথা বলা হচ্ছে। আমি জানি, গত কয়েক বছরে ইউএনএফপিএ এই বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে কাজ করেছে। আমরা এটি UN News থেকে তুলে ধরেছি। এটি এমন একটি বিষয় যা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব আগ্রহী। আপনি কি এমন কোনো বাস্তব উদাহরণ দেখেছেন যেখানে আইন প্রণয়নকারী সংস্থা নাগরিক সমাজকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে এই প্রথাটিকে রোধ করা গেছে বা এটিকে সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য করে তোলা হয়েছে?

নাতালিয়া ক্যানেম: এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। মানসিকতার পরিবর্তনই একটি মেয়ের জীবনে প্রকৃত পরিবর্তন আনবে, এমনকি তার পরিবারের ভিতরেও। তার কমিউনিটি, ধর্মীয় ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, তার শিক্ষক এবং পুরো সমাজের বিভিন্ন স্তরের সকলকেই সেই মানসিকতা পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে আসতে হবে।

আসল বিষয় হলো, আমি মনে করি ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ, ইউএন ওমেন এবং আরও অনেক সংস্থা বাল্যবিবাহ, নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে কাজ করছে এবং এটি বিশাল প্রভাব ফেলছে। কারণ অনেক কিশোরীই গর্ভধারণ স্বেচ্ছায় করে না বরং জোরপূর্বক। এক্ষেত্রে এই প্রচেষ্টাগুলো সত্যিই বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে।

আমরা এটি কিছু নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানে দেখতে পাই। উদাহরণস্বরূপ, মাতৃমৃত্যুর হার গত প্রায় ২০ বছরে ৪০ শতাংশ কমেছে। এটি একটি বিশাল অর্জন, কারণ এটি এমন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা নারীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। পাশাপাশি, আমরা সাফল্যের সাথে সচেতনতা তৈরি করেছি যে কমবয়সী ও অপুষ্ট নারীদের গর্ভধারণের সময় মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি।

নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ-এর ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের অগ্রগতি দেখেছি। তবে বলতে হয় কোভিড এই অগ্রগতি কিছুটা থামিয়ে দিয়েছিল। কারণ মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছিল না এবং তারা এমন কমিউনিটিতে ছিল যেখানে তাড়াহুড়ো করে নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ করা হচ্ছিল।

আমরা অনেক তরুণকে নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ-এর বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখেছি। আর আপনি জানেন, যখন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট বোঝে এমন কেউ নিজ কমিউনিটির তরুণদের পাশে দাঁড়ায়, তখন সেটি সবসময়ই বেশি কার্যকর হয়।

এমনকি ইন্দোনেশিয়াতেও যেখানে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় সংখ্যাগতভাবে নারীর যৌনাঙ্গ বিকৃতকরণ-এর ঘটনাও অনেক বেশি সেখানেও আমরা এই প্রথার হ্রাস লক্ষ্য করেছি। তবে এটি একবারে শেষ হয়ে যাওয়ার মতো কিছু নয়, তাই আমরা ধৈর্য ধরে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝি। আমরা জানি, এই কর্মসূচিতে আমরা সফল হলে, সফল হবে পুরো কমিউনিটি।

তাই কিছু নির্দিষ্ট প্রথার বিরুদ্ধে ধর্মীয় ও প্রথাগত নেতাদের দাঁড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে, আমার মনে হয় স্কুল ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাতে মেয়েরা নিজেরাই ঝুঁকি বুঝতে পারে এবং নিজেদের জন্য আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয়।

মিতা হোসালি: আপনি মাতৃমৃত্যুর হার কমার কথা উল্লেখ করেছেন। আমি জানি, এখন ইউএনএফপিএ তথ্যভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রেও অনেক বেশি সম্পৃক্ত হয়েছে। যেমন; ডেটা ড্যাশবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে কাজ করা। আমরা জানি, উদাহরণস্বরূপ, এখন বিশ্বে ৮০০ কোটির বেশি মানুষ রয়েছে, ভারত জনসংখ্যার দিক থেকে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে। আমরা আরও জানি যে, গড় আয়ু উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে প্রায় ৭৩ বছরে পৌঁছেছে।

তবে আমার ধারণা উদ্বেগের বিষয় এখনও রয়ে গেছে। আমরা কি নারী ও কিশোরীদের যৌন স্বাস্থ্য এবং তাদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে একই ধরনের অগ্রগতি করতে পেরেছি? তাহলে আমরা কীভাবে এই অর্জনগুলো রক্ষা করব, একইসঙ্গে যেসব নারী এখনও তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না এবং যেসব কিশোরীও প্রাধান্য পাচ্ছে না—তাদেরও কীভাবে অগ্রাধিকারে আনতে পারব?

নাতালিয়া ক্যানেম: আমার কাছে তথ্যই গল্প বলে, আর এই গল্পটি ছাদ থেকে চিৎকার করে বলার মতোই। আমার এক পূর্বসূরি, বিশিষ্ট ডাক্তার মার্থা সাদিক বলেছিলেন, যদি উন্নয়ন চান, তবে নারী ও মেয়েদের উন্নয়নের কেন্দ্রে রাখুন। আর প্রতিটি তথ্যই দেখায় যে অগ্রগতির সূচকে নারী ও মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে।

এটি আসলে কোনো মহাদেশের বিষয় নয়। দেশের ভেতরে যেমন, দেশগুলোর মধ্যেও একই অবস্থা দেখা যায়। তাই আমরা চেষ্টা করেছি, এই তথ্যগুলোকে এমন একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে, যা আইন প্রণেতাদের আরও ভালো আইন তৈরি করতে সাহায্য করে এবং পরিবারগুলোকে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

এ বছর আমাদের স্টেট অফ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রতিবেদনে আমরা এমন একটি বিষয়ে আলোকপাত করেছি, যা আগে জাতিসংঘ খুব বেশি সামনে আনেনি। তা হলো সম্পূর্ণ প্রজনন সংক্রান্ত প্রশ্ন। আমরা নারীদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম, কারা একটি, দুটি বা তিনটি সন্তান চায়। আমরা পুরুষদেরও জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন তারা চাওয়া অনুযায়ী পরিবারের আকার রাখতে পারছে না। তাদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিক কারণ, আবাসন সংক্রান্ত সমস্যা এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ভালো অভিভাবক হতে পারবে কিনা সেই সন্দেহের কথা উল্লেখ করেছে। 

এর আগে আমরা আরও উল্লেখ করেছি যে, বিশ্বের মোট গর্ভধারণের মাত্র অর্ধেকই সচেতনভাবে পরিকল্পিত।

অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক গর্ভধারণ ছিল কথিতভাবে “আকস্মিক”। কখনও তা আনন্দের কারণ হলেও, বেশিরভাগ সময়ই তা কোনো কিশোরীর জীবনের পরিকল্পনাকে ব্যাহত করে দেয়।

তাই আমাদেরকে এই তথ্যগুলো মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলতে হবে। আপনি যে ড্যাশবোর্ডের কথা বলেছেন, আমাদের জনসংখ্যা ও তথ্য বিভাগ এ নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছে। তারা একে একে প্রতিটি দেশে দেশগুলোর নেতৃত্বে জনগণনা প্রস্তুতির কাজে সহযোগিতা করেছে।

এবং এটি এমন একটি বিষয় যা সত্যিই প্রশংসিত হয়। যখন কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন সেটিকে গণনা করা ও তার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা সবকিছু বদলে দিতে পারে।

আমি আরও বলব, আমার উদ্বেগের একটি দিক হলো অর্থায়ন কমে যাওয়া এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডেটাবেস হারিয়ে যাওয়া। আমাদের বছরে বছরে মাতৃমৃত্যুর পরিসংখ্যান অনুসরণ করতে সক্ষম হতে হবে। যাতে আমরা জানতে পারি কোন কোন অঞ্চলে আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে সত্যিই ভালো ও নির্ভুল তথ্য থাকা অপরিহার্য।

তথ্যসূত্র: https://news.un.org/en/audio/2025/07/1165440

Leave a Reply