মানব ডিম্বাণু-শুক্রাণুতে প্লাস্টিক – প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে শঙ্কায় বিজ্ঞানীরা

চুলের চেয়েও সরু ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা এখন মানুষের দেহের এমন সব জায়গায় পৌঁছে গেছে, যা আগে কল্পনাও করা যেত না। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান সোসাইটি অব হিউম্যান রিপ্রোডাকশন অ্যান্ড এমব্রায়োলজির বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থাপিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে ভয়াবহ এ চিত্র।

গবেষণাটি পরিচালনা করেছে স্পেনের ‘নেক্সট ফার্টিলিটি মুর্সিয়া’র একটি দল, নেতৃত্বে ছিলেন ড. এমিলিও গোমেজ-সানচেজ। তারা ২৯ জন নারীর ফলিকুলার ফ্লুইড (ডিম্বাণুর আশপাশের তরল) ও ২২ জন পুরুষের সেমিনাল ফ্লুইড (শুক্রাণুর তরল পরিবেশ) পরীক্ষা করেন। দেখা যায়, নারীদের ৬৯ শতাংশ এবং পুরুষদের ৫৫ শতাংশ নমুনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা রয়েছে।

এই কণাগুলোর মধ্যে ছিল পলিটেট্রাফ্লুওরোইথিলিন (পিটিএফই) ও পলিপ্রোপিলিন (পিপি)—যা সাধারণত নন-স্টিক কুকওয়্যার ও খাদ্য মোড়ানো প্যাকেট তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। নারীদের ৩১ শতাংশ ডিম্বাণু তরলে এবং পুরুষদের ৪১ শতাংশ শুক্রাণু নমুনায় পিটিএফই কণা পাওয়া গেছে।

এর আগে ২০২১ সালে ইতালির এক গবেষণায় প্রতিটি গর্ভনালিতে গড়ে ১২টি প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি ধরা পড়ে। এমনকি অস্ত্রোপচারের সময় ফুসফুসের টিস্যু থেকেও মিলেছে এ ধরনের কণা। গবেষকরা বলছেন, খাবার, পানি ও শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে এসব প্লাস্টিক কণা মানবদেহে প্রবেশ করছে।

ইঁদুরের ওপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক চর্বির সঙ্গে মিশলে তা সহজে হজমনালির মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করতে পারে। এসব কণায় সংস্পর্শে থাকা ইঁদুরদের শুক্রাণুর গুণমান কমে যায়—ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও গতি হ্রাস পায়। প্লাস্টিকের কারণে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস বেড়ে গিয়ে দেহের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে।

ন্যানোপ্লাস্টিকের প্রভাবে লেইডিগ কোষের মাইটোকন্ড্রিয়া সংকুচিত হয়ে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রমাণও মিলেছে। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে প্রকাশিত একাধিক পর্যালোচনা প্রবন্ধ বলছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক হরমোন নিয়ন্ত্রণকারী হাইপোথ্যালামাস‑পিটুইটারি‑গোনাডাল অক্ষকে ব্যাহত করে। এর প্রভাব পড়ে ডিম্বাণু পরিপক্বতায়ও।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ বিষয়টি এখন শুধু পরিবেশ নয়, মানব প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যও বড় হুমকি হয়ে উঠেছে। প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্মের জন্য সেটি ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।

সূত্রঃ The Business Standard

Leave a Reply