বাংলা মেডিকেল জিপিটি – কিশোর-কিশোরীদের মনের অজানা প্রশ্নের উত্তর এখন হাতের মুঠোয়
বাংলাদেশে কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য (এসআরএমএইচ) বিষয়ক সমস্যাগুলো সমাজের ট্যাবু ও কুসংস্কারের কারণে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দেয়। এই প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করার জন্য ও স্বাস্থ্যসেবাকে সবার হাতের নাগালে পৌঁছে দিতে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হলো বাংলাদেশের প্রথম বাংলা মেডিকেল জিপিটি ‘সুস্বাস্থ্য ডট এআই’।
‘সুস্বাস্থ্য ডট এআই’ মোবাইল অ্যাপটির মাধ্যমে টিনএইজ ছেলেমেয়েরা তাদের বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তর জানতে পারবে। অ্যাপটি তৈরি করেছে মেডিকেল সেবা গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিমেড হেলথ।
সোমবার (২৭ মে) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘স্মার্ট হেলথ কেয়ার ফর স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে সাংবাদিকদের সামনে ‘সুস্বাস্থ্য ডট এআই’ ইঞ্জিনটির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনায় এসব কথা বলেন সিমেড হেলথ-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ডা. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন।
সুমাইয়া ইসলামের সঞ্চালনায় সেমিনারে সিমেড হেলথ-এর প্রতিষ্ঠাতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা’ এর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সিমেড হেলথ এই সমাধানটি উদ্ভাবন করে, যা সুস্বাস্থ্য অ্যাপের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের যৌন, প্রজনন ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নের রিয়েল টাইম ক্লিনিক্যালি ভ্যালিডেটেড উত্তর দিতে সক্ষম। সুস্বাস্থ্য, এআই একটি মাল্টি-লেয়ারড প্ল্যাটফর্ম যা যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের শিক্ষা, স্ক্রিনিং, রেফারেল এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের জন্য ওয়েব, অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএস মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়।
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, অটোমেটেড স্পিচ রিকগনিশন (এএসআর) এবং টেক্সট টু স্পিচ (টিটিএস) প্রযুক্তির সমন্বয়ে এটি একটি চিকিৎসাগতভাবে প্রশিক্ষিত চ্যাটবট হিসেবে কাজ করে যা কিশোর-কিশোরীদের এসআরএমএইচ বিষয়ক তথ্য প্রদান করে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরিতে সহায়তা করে এবং সমস্যা শনাক্তকরণ ও ঝুঁকি মূল্যায়ন করে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে সংযুক্ত করার পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করে। এই প্ল্যাটফর্ম ভবিষ্যতে নীতিনির্ধারকদের স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে এবং কার্যকরভাবে রিসোর্স বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, সিমেড হেলথ হল একটি হেলথ-টেক স্টার্টআপ যা তার ৩৬০-ডিগ্রি ডিজিটাল হেলথকেয়ার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবার প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করছে। এটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, স্ক্রিনিং, প্রাথমিক রোগনির্ণয় ও ইন্টারভেনশনের জন্য রেফারেলের সাথে সংযুক্ত করে স্বাস্থ্যসেবার ল্যান্ডস্কেপকে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে এবং ডিজিটাল হেলথ ইকোসিস্টেম তৈরি করে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (UHC) নিশ্চিতের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDGs) অর্জনে ভূমিকা পালন করছে।
বাংলা মেডিকেল জিপিটি ইঞ্জিনটির ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে অধ্যাপক ডা. খন্দকার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা একদল দক্ষ ও ডায়নামিক এআই এক্সপার্ট ইঞ্জিনিয়ার টিম নিয়ে এটির যাত্রা শুরু করেছি। আমাদের এটিকে আরও অনেক দূরে নিয়ে যেতে চাই। আমরা কোভিডের সময় সিমেড হেলথ-এর টিম মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে রক্ত পরীক্ষা, করোনার পরীক্ষা করেছি। আমাদের পরিকল্পনা আছে আগামীতে প্রত্যেকজন মানুষ যেন তাদের যেকোন রোগের বিষয়ে সার্চ করে আমাদের বাংলা মেডিকেল জিপিটি ইঞ্জিনটিতে যেন সমাধান পেতে পারেন এমন একটা প্ল্যাটফর্ম বানাতে চাই। আমরা একদল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এখানে যুক্ত আছি। এখন সাংবাদিকদেরও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে একটা নতুন উদ্ভাবনী জাগরণ আনতে চাই।
সেমিনারে ‘সুস্বাস্থ্য ডট এআই’ বাংলা মেডিকেল জিপিটি ইঞ্জিনটির বানানো পেছনের গল্প ও বিভিন্ন টেকনিকেল বিষয়ে আলোকপাত করেন সিমেড হেলথ-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মঈনুল হক চৌধুরী। বাংলা মেডিকেল জিপিটি কারা কীভাবে বানিয়েছেন, এতে কী কী ফিচার রয়েছে, কি ধরনের তথ্য দিয়ে বানানো হয়েছে এটি, তথ্যগুলো কোথা থেকে কীভাবে আনা হয়েছে, মেধাস্বত্বের নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি না, যারা ব্যবহার করবেন তাদের এই স্পর্শকাতর প্রশ্ন ও গোপন বিষয়গুলোর কতটা নিরাপদ থাকবে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
ডা. মার্জিয়া জামান বাংলা মেডিকেল জিপিটি ইঞ্জিনটির ব্যবহার করার নিয়মগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করেন। সে সঙ্গে সেমিনারে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন সাংবাদিকদের প্রশ্ন নিয়ে বাংলা মেডিকেল জিপিটিতে প্রাকটিক্যালি প্রশ্ন করলে সাথে সাথে ইঞ্জিন সেগুলোর উত্তর দেয়। বিভিন্ন জন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন। সাথে সাথে বাংলা মেডিকেল জিপিটি সেগুলোর উত্তর দেয়।
প্রফেসর ডা. সালেহা চৌধুরী বলেন, আমাদের কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য, অধিকার এবং মানসিক স্বাস্থ্য (এসআরএমএইচ) বিষয়ক সমস্যাগুলো সমাজের ট্যাবু ও কুসংস্কারের কারণে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। আমরা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিতে গিয়ে এ বিষয়টি ভালভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি। সময়টা যখন প্রযুক্তির। আমাদের এই তরুণ প্রজন্মও প্রযুক্তিপ্রেমী। সবার হাতেই একটা স্মার্টফোন আছে। সাধারণত কিশোর-কিশোরী তাদের বয়ঃসন্ধিকালীন যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যাগুলো তাদের বাবা-মায়ের কাছে বলতে লজ্জা পায়। বন্ধুদের কাছে বললেও সংখ্যায় কম। ফলে তারা নানান সমস্যায় ভোগে। আমারা এসব সমস্যাগুলো প্রযুক্তির সাহায্যে দিতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। বাংলা মেডিকেল জিপিটিতে এখন থেকে কিশোর-কিশোরী তাদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো এই সার্চ ইঞ্জিনে করতে পারবে।
সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘সুস্বাস্থ্য ডট এআই’ টিমের এআই এক্সপার্ট রিফাত শাহরিয়ার, রিফাত রহমান, তারেক আল মামুন প্রমুখ।
সূত্র – কালবেলা