পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস – বন্ধ্যাত্বের অভিশাপ থেকে নিরাপদে থাকুক সকল নারী
শারমিন আক্তার, ২৭ বছর বয়সী একজন নারী। তিনি কয়েক বছর ধরে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। চিকিৎসকের কাছে গেলে ধরা পড়ে যে, তিনি পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) এ আক্রান্ত। এই রোগটি নারীদের বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ হিসেবে পরিচিত।
বিশ্বজুড়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ নারী পিসিওএসে ভুগছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ইশরাত জেরিন বলেন, “পিসিওএস মূলত হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হয়, যা ডিম্বাশয়ে স্বাভাবিক ডিম্বাণু নিঃসরণে বাধা সৃষ্টি করে।”
পিসিওএসের ক্ষেত্রে নারীদের শরীরে পুরুষ হরমোন এন্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ডিম্বাশয়ে থাকা তরলপূর্ণ ফলিকল ফেটে যেতে বাধা দেয়। ফলে ডিম্বাণু বের হতে পারে না এবং নারীদের মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মাসিক বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
এই সমস্যার কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও চিকিৎসকরা বলছেন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বংশগত কারণ এবং অতিরিক্ত ইনসুলিন উৎপাদন এর পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে। ডা. ইশরাত জেরিন আরও জানান, “যাদের পরিবারে পিসিওএসের ইতিহাস আছে, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।”
পিসিওএসের উপসর্গগুলো একেকজনের ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। তবে সাধারণত অনিয়মিত মাসিক, মুখমণ্ডল বা শরীরের বিভিন্ন অংশে অতিরিক্ত লোম গজানো, ব্রণ, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, চুল পাতলা হওয়া বা টাক পড়া ইত্যাদি লক্ষণগুলো দেখা যায়। তাছাড়া মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার মতো স্বাস্থ্য সমস্যা এই রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পিসিওএসের কারণে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিও থাকে। যদিও এটি মানেই নারীরা কখনো মা হতে পারবেন না, তা নয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং জীবনযাপনের পরিবর্তন করে তারা সন্তান নিতে পারেন। তবে পিসিওএসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই, রোগটি নিয়ন্ত্রণ করাই মূল লক্ষ্য।
ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন রোগীদের জন্য সহায়ক হতে পারে। ডা. ইশরাত বলেন, “যে সমস্ত নারীরা পিসিওএসে ভুগছেন, তাদের ওজন কমিয়ে বিএমআই ২৫ এর নিচে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যা অনেকটাই কমে আসে।”
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। তাই এই সমস্যা সমাধানে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং অধিকার নিয়ে আরও গবেষণা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
Source: The Daily Star