ডিম্বাশয়ে চকলেট সিস্ট: কী, কেন হয় এবং গর্ভধারণে এর প্রভাব
অনেক নারী আজকাল ডিম্বাশয়ে চকলেট সিস্টের সমস্যায় ভুগছেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. সাহানারা চৌধুরী জানিয়েছেন, এই সিস্ট এক ধরনের এন্ডোমেট্রিয়াল সিস্ট, যা সাধারণত এন্ডোমেট্রিওসিসের ফলাফল। এন্ডোমেট্রিওসিস হলো জরায়ুর ভেতরের স্তর এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে বৃদ্ধি পাওয়া। এটি শরীরের অন্যান্য স্থানে গিয়ে জমে থাকে এবং পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণ করে, যা জমে চকলেট সিস্ট তৈরি হয়। দীর্ঘ সময় রক্ত জমে থাকার কারণে এটি চকলেটের মতো দেখায়।
চকলেট সিস্টের কারণ
চকলেট সিস্ট হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। নারীদের অস্বাভাবিক পিরিয়ড বা রেট্রোগ্রেড মেন্সট্রুয়েশন এর অন্যতম কারণ। কিছু ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অতিরিক্ত কার্যকারিতাও এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণ হতে পারে। পিরিয়ডের সময় রক্ত জরায়ুতে না থেকে শরীরে ফিরে যাওয়ার ফলে পেলভিক গহ্বরে এন্ডোমেট্রিয়াম টিস্যু জমে থাকে। এছাড়া সিজারের পর স্কার টিস্যুর ওপরও এন্ডোমেট্রিওসিস দেখা যেতে পারে।
লক্ষণ
চকলেট সিস্টের প্রধান লক্ষণ হলো তলপেটে স্থায়ী ব্যথা। এছাড়া পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা ও অতিরিক্ত রক্তপাত, যৌনমিলনে বা পায়খানা-পস্রাবের সময় ব্যথা হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চকলেট সিস্টের কারণে বন্ধ্যাত্ব দেখা দিতে পারে।
গর্ভধারণে প্রভাব
চকলেট সিস্ট নারীদের বন্ধ্যাত্বের একটি বড় কারণ। প্রায় ৪০-৬০ শতাংশ বন্ধ্যাত্বের রোগীর মধ্যে চকলেট সিস্ট পাওয়া যায়। সিস্ট ফ্যালোপিয়ান টিউবকে আটকে দেয়, ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম জরায়ুতে পৌঁছাতে পারে না। তাছাড়া সিস্টের প্রদাহজনিত রস ডিম ও শুক্রাণু নষ্ট করে। এ কারণে গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
যদি কারো পিরিয়ডের সময় অতিরিক্ত ব্যথা, যৌনমিলনে ব্যথা বা বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আলট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষার মাধ্যমে চকলেট সিস্ট শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা নির্ভর করে সিস্টের আকার ও রোগীর উপসর্গের ওপর। ছোট সিস্ট থাকলে ওষুধ দিয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে সিস্ট ছোট করা যায়। বড় সিস্ট হলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে।
চকলেট সিস্টের সমস্যা নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা ও সচেতনতা এ সমস্যার সমাধানে সহায়ক।
সূত্রঃ ডেইলী স্টার