ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসার – সচেতনতার শুরু হোক এখন থেকেই

বাংলাদেশে নারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর এ ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ১.৮ শতাংশ হারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌসের মতে, এই প্রবণতা দেশজুড়ে নারীদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে।

ওভারিয়ান ক্যানসার মূলত ডিম্বাশয়ে উৎপন্ন হওয়া ক্যানসার। ডিম্বাশয় বা ওভারি নারী প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ, যা ডিম্বাণু এবং হরমোন তৈরি করে। ওভারির বাইরের স্তর, এপিথেলিয়াল কোষ থেকে ৯০ শতাংশ ওভারিয়ান ক্যানসারের উৎপত্তি হয়। এছাড়া, জীবাণু কোষ বা জার্ম সেল এবং স্ট্রোমাল কোষ থেকেও ক্যানসার হতে পারে, তবে এদের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম। গবেষণায় দেখা গেছে, ওভারিয়ান ক্যানসার সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে দেখা দেয়। তবে বংশগত কারণে জিনের মধ্যেও এই ঝুঁকি বহন করা সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের পরিবারে মা বা বোনের স্তন ক্যানসার বা ওভারিয়ান ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাদের এই ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া, যারা অল্প বয়সে মাসিক শুরু করেছেন বা দেরিতে মেনোপজ হয়েছে, তাদের ঝুঁকি বাড়ে। যেসব নারী সন্তান জন্মদান করেননি কিংবা যাদের ওজন বেশি, তাদেরও ওভারিয়ান ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ওভারিয়ান ক্যানসারের প্রথম দিকে বিশেষ কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। ফলে রোগীরা সাধারণত অ্যাডভান্সড স্টেজে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় অন্য সাধারণ সমস্যার সাথে মিশে যায়, যেমন ক্ষুধামন্দা, পেট ফোলা, প্রস্রাবের অসুবিধা, ওজন কমে যাওয়া, এবং দুর্বলতা। আরও গুরুতর পর্যায়ে পেটে পানি জমা হয় এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

ওভারিয়ান ক্যানসারের চিকিৎসায় মূলত সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হয়। সাধারণত রোগীকে প্রথমে সার্জারি করা হয় এবং তার পরবর্তী পর্যায়ে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। এছাড়াও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টার্গেটেড থেরাপি, হরমোন থেরাপি, ও ইমিউনো থেরাপির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যদিও ইমিউনো থেরাপি তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।

ওভারিয়ান ক্যানসার প্রতিরোধে সুস্থ জীবনযাপন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চর্বিযুক্ত খাবার কম খাওয়ার মাধ্যমে এ ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, যারা ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল পাঁচ বছর টানা গ্রহণ করেন, তাদের ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়। এছাড়া, একাধিক সন্তান থাকা এবং সন্তানকে এক বছরের বেশি বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদেরও ঝুঁকি কম থাকে।

ওভারিয়ান ক্যানসার নিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি, কারণ এই ক্যানসারের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সহজে ধরা পড়ে না। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতার মাধ্যমেই এ থেকে প্রতিরোধ সম্ভব।

সূত্রঃ ডেইলী স্টার

Leave a Reply