এ কেমন বিচার? – ধর্ষকের সাথে বিয়ে কোন সমাধান নয়, এটি নতুন নির্যাতনের পথ

 

২০০২ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে অন্তত ২০ জন ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাদেরই অভিযুক্ত ধর্ষকদের সঙ্গে। প্রথম আলোর একটি অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে এসেছে। এসব বিবাহের মধ্যে ১১টি শেষ হয়েছে নির্যাতন, বিচ্ছেদ কিংবা মানসিক অস্থিরতায়। একটি বিয়ে এখনো চলছে, তবে সেই ধর্ষিতার এখনো সহ্য করছেন সহিংসতা। বাকি আটটি বিবাহের অবস্থা জানা যায়নি।

এই ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন নয়, বরং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার একটি গভীর অসুস্থতার প্রতিচ্ছবি। ধর্ষণের মতো অপরাধে আইনের কঠোর শাস্তি থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে পারিবারিক চাপে, সামাজিক লজ্জা বা গায়ে কলঙ্ক এড়াতে ধর্ষিতাকেই বিয়ে করতে বাধ্য করা হয় তার ধর্ষককে।

বিয়ের পরও শেষ হয় না নির্যাতন

গত চার বছরে প্রথিতযশা একটি দৈনিক পত্রিকা আরও ৮ জন ধর্ষিতার-এর সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যাদের একইভাবে অভিযুক্তদের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাদের কেউই টিকিয়ে রাখতে পারেননি পরিবার। অনেকেই ভেঙে পড়েছেন মানসিকভাবে। কেউ কেউ সন্তানের পিতৃপরিচয়ও পাননি। একটি মর্মান্তিক ঘটনায়, ধর্ষিতার বিয়ের পর খুন হন।

সিলেটের একটি ঘটনা আরও ভয়াবহ। এক কিশোরী ধর্ষণের ফলে গর্ভবতী হন। পরে বিয়ে দিতে বাধ্য করা হয় অভিযুক্তকে। কিন্তু বিয়ের পর শুরু হয় নির্যাতন। তাকে জোর করে গর্ভপাত করানো হয়। অবশেষে তাকে বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয় সন্তানসহ।

আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই

বাংলাদেশে নারীদের সুরক্ষার জন্য “নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন” থাকলেও অনেক সময় গ্রাম্য সালিশ, পারিবারিক চাপ ও সমাজের ভয় এই আইনকে কার্যত অকেজো করে তোলে। অনেক ক্ষেত্রেই এসব বিয়ে সালিশি সিদ্ধান্তে হয়, আদালতের অনুমতিও নেওয়া হয়। এমনকি কিছু ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পর্যন্ত এসব বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।

২০২৪ সালের সহিংসতা বিষয়ক এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ বিবাহিত নারী কখনো না কখনো স্বামীর হাতে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিলে, ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার-এর বিয়ে মানে হলো তাকে আরেক ধাপে ঠেলে দেওয়া নির্যাতনের।

রাষ্ট্রের করণীয় কী?

  • প্রথমত, এসব বিয়ে যে অবৈধ ও অনৈতিক, তা নিয়ে রাষ্ট্রকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে।
  • দ্বিতীয়ত, আদালতকে এমন বিয়ে অনুমোদন না দেওয়ার নির্দেশনা দিতে হবে।
  • তৃতীয়ত, ধর্ষিতাদের জন্য মানসিক, আইনি ও স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।

শেষ কথা

ধর্ষণ একটি অপরাধ, এর শাস্তি বিয়ে নয়। ধর্ষিতাদের ন্যায়বিচার পাওয়া উচিত, বিবাহ নয়। যারা ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত, তাদের উচিত বিচার হওয়া এবং দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি দেওয়া। কোনোভাবেই ধর্ষিতাদের আবার সেই অপরাধীর সঙ্গে জীবনের বন্ধনে বাধা উচিত নয়। এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে এখনই।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Reply