শিশুরা বাঁচার চেয়েও বেশি কিছু পাওয়ার দাবিদার: বিশ্ব শিশু দিবসের প্রতিফলন
২০ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা আসলে কী রেখে যাচ্ছি। গাজা বা সুদানের কোনো শিশু যখন কান ফাটানো বিস্ফোরণের শব্দে ঘুমিয়ে পড়ে, আর অন্যদিকে কোনো শিশু নিশ্চিন্ত বাড়িতে নিরাপদে বড় হয়, তখন বৈষম্যটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবুও সত্য একই থাকে। প্রতিটি শিশু নিরাপত্তা, মর্যাদা আর আশার সমান অধিকার নিয়ে এই পৃথিবীতে জন্মায়। এই দিনটি আমাদের সেই প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা তাদের জন্য এমন একটি পৃথিবী গড়তে চাই যা আজকের পৃথিবীর চেয়ে ভালো।
জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী আঠারো বছরের নিচের যে কেউ শিশু হিসেবে গণ্য হয়। ১৯৫৪ সালে জাতিসংঘ প্রথম ‘ইউনিভার্সাল চিলড্রেন’স ডে’ চালু করে, যার লক্ষ্য ছিল শিশুদের অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিত করা। ২০ নভেম্বর তারিখটি বিশেষ হয়ে ওঠে ১৯৫৯ সালে শিশু অধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে। ১৯৮৯ সালে শিশু অধিকার সনদ গ্রহণের পর এটি মানবাধিকারের ইতিহাসে সবচেয়ে স্বীকৃত নথিগুলোর একটি হয়ে ওঠে। সনদটি বলে দেয়: জন্মস্থান বা পরিস্থিতি যাই হোক, প্রতিটি শিশুর অধিকার একই।
কিন্তু বাস্তবে সেই অধিকার আজও নিরাপদ নয়। পৃথিবীর নানা দেশে শিশুরা এখনও সহিংসতা, নির্যাতন ও অবিচারের মুখোমুখি হয়। ইউনিসেফ জানায়, বিশ্বে প্রায় ৩৭ কোটি নারী ও কন্যাশিশু আঠারো বছর হওয়ার আগেই যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। মানসিক নির্যাতনসহ অন্যান্য অশারীরিক ক্ষতিও যুক্ত করলে সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫ কোটি। আবার জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে জীবিত প্রায় ৬৪ কোটি নারী ও কন্যাশিশু আঠারো বছরের আগেই বিয়ে হয়েছে। এই সংখ্যাগুলোই বলে দেয় পরিস্থিতি কতটা গভীর।
এসআরএইচআরকে অনেক সময় শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয় হিসেবে ভাবা হয়। সত্য হলো, এর শিকড় রয়েছে শৈশবেই। শিশুদের শরীর সম্পর্কে বোঝার অধিকার আছে। নিরাপদ পরিবেশে কথা বলার অধিকার আছে। যৌন সহিংসতা থেকে সুরক্ষিত থাকার অধিকার আছে। এসব অধিকার অস্বীকার করা হলে ঝুঁকি শুধু বাড়ে। অল্পবয়সে বিয়ে অনেক মেয়েকে খুব তাড়াতাড়ি মাতৃত্বে ঠেলে দেয়। এতে স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ে এবং জীবনের সম্ভাবনাগুলো সংকুচিত হয়ে যায়।
বিশ্ব শিশু দিবস আনন্দের দিন। একই সঙ্গে এটি দায়বদ্ধতারও দিন। আমাদের দায় হলো শিশুদের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা এবং তাদের এমন ক্ষমতা দেওয়া যাতে তারা নিজের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়তে পারে। শিশুদের জন্য নিরাপদ, সম্মানজনক পৃথিবী গড়তে পারলে তবেই আমাদের ভবিষ্যৎ সত্যিকার অর্থে নিরাপদ হবে।
সূত্র:
১. ইউনিসেফের ওয়েবসাইট
২. ইউএনআরডব্লিউএ-এর ওয়েবসাইট
৩. জাতিসংঘের ওয়েবসাইট
