রূপান্তরের বিজয়: ট্রান্সজেন্ডার কাউন্সিলর হিসেবে সাগরিকার ঐতিহাসিক সাফল্য

রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্রে ইতিহাস রচনা করেছেন সুলতানা আহমেদ, যিনি সাগরিকা নামে পরিচিত। সাগরিকা সকল বাঁধা ভেঙে দিয়ে দেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার কাউন্সিলর হন। সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তার দুর্দান্ত সাফল্য লিঙ্গ সম্পর্কে আমাদের সমাজের ধারনাতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে এবং সহানুভুতির জায়গাকে আরো দৃঢ় করেছে।

সাগরিকার এই সফলতার পথ সহজ ছিল না। একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও শৈশবে হিজড়া ব্যক্তিদের একটি সম্প্রদায়ে যুক্ত হতে বাধ্য হন। যা ছিলো তার প্রতি সমাজের অবহেলার শুরু। এই তিক্ত অভিজ্ঞতার কাছে তিনি হার মানেননি বরং তার অভিজ্ঞতাগুলোকে একটি মহৎ উদ্দেশ্যে জনগণের সেবা করার কাজে লাগিয়েছেন।

সাগরিকা অটল প্রত্যয়ের সাথে ঘোষণা করেন, “আমি আমার মতো ব্যক্তিদের জন্য কাজ করতে চাই; যারা সমাজে সুবিধাবঞ্চিত এবং অবহেলিত।” প্রান্তিকদের প্রতিনিধিত্ব করতে তার লক্ষ্য ছিলো একটি ন্যায় ও সহানুভূতিশীল গণতন্ত্র স্থাপন করা।

তার যাত্রা হিজড়া সম্প্রদায়ের অনেকের সংগ্রামের প্রতীক। রাজনৈতিক অঙ্গনে পা রাখার পর এই আশায় কাজ করেন যে, তিনি যেভাবে অবহেলার শিকার হয়েছেন অন্য কেউ যাতে সে পরিস্থতিতে না পরে। তার সংকল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় একটি সর্বজনীন সমাজ গঠনের দায়িত্ব সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রত্যেকের উপর রয়েছে।

সাগরিকা কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তার কমিউনিটি যেসব বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চান৷ তার উদ্দেশ্য কেবল ট্রান্সজেন্ডার অধিকারের পক্ষে সমর্থন করা নয় বরং এই ধারনাকে সুদৃঢ় করা যে, ‘সবাই সমান সুযোগ এবং মর্যাদার যোগ্য’।

সাগরিকার সাফল্যের ফলাফল হিজড়া সম্প্রদায়ের বাইরেও ছড়িয়ে গেছে। ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’এর সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দীন মন্তব্য করেন, এই সাফল্যের দিকে তার নিরলস যাত্রা তাকে মানবতার প্রতীকে পরিণত করেছে। মানুষের বেদনা ও কষ্টের প্রতি প্রকৃত সহানুভূতি প্রদর্শন করে তিনি তাদের আস্থা ও প্রশংসা অর্জন করেছেন।

সাগরিকার জয় সমাজের জন্য এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার প্রতিনিধিত্ব করে, যা কুসংস্কারের বাইরে বিকশিত হওয়ার এবং পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করার ইচ্ছাকে তুলে ধরে। তার সাহসে, আমরা আমাদের পক্ষপাত এবং ভুল ধারণার মোকাবিলা করার অনুপ্রেরণা পাই। তার সফলতা আমাদের লিঙ্গ, ধর্ম বা পরিচয়ের ভিত্তিতে নিজেদের এবং অন্যদের উপর যে সীমাবদ্ধ মনোভাব তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

এই ঐতিহাসিক মাইলফলক একটি অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে যে, অগ্রগতি আত্মতুষ্টির মাধ্যমে অর্জিত হয় না; হয় অবিরাম এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। এটি আমাদের চিন্তা-ভাবনায় এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা কুসংস্কারগুলির মোকাবিলা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করে।

সাগরিকার যুগান্তকারী সাফল্যের উদযাপন আনন্দ এবং সাহসীকতার একটি উপলক্ষ হোক। আসুন আমরা এই দৃষ্টান্ত দ্বারা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি যেখানে সকল ব্যক্তি, তাদের ব্যক্তি পরিচয়ের ঊর্ধ্বে কোনো বৈষম্য ছাড়াই তাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। একমাত্র তখনই আমরা প্রকৃতপক্ষে দাবি করতে পারি যে, আমরা এক সহানুভূতিশীল ও আলোকিত সভ্যতায় পরিণত হয়েছি।

সূত্র: নিউ এইজ

 

Leave a Reply