এক নীরব সংগ্রামের উপর আলোকপাত – শহরের বস্তিতে নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য মোকাবিলা
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ পরিচালিত সাম্প্রতিক গবেষণায় ঢাকার শহরের বস্তিতে বসবাসকারী নারীদের একটি দুঃখজনক বাস্তবতা উঠে এসেছে। নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত বা গর্ভপাতের ফলে তাদের মধ্যে বিষণ্ণতা এবং দুশ্চিন্তার প্রবনতার মত উল্লেখযোগ্য মানসিক সাস্থ্য সমস্যার প্রতি অবহেলার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
জুলাই 2020 থেকে ডিসেম্বর 2021 এর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা আছে এমন নারীদের জরিপে 240 জনের মধ্যে 77.5% হতাশাগ্রস্ত হবার লক্ষনের কথা জানিয়েছে। উপরন্তু, উত্তরদাতাদের অর্ধেকের ও বেশি 58.75%, জানিয়েছেন যে তাদের সাথে ঘটা ঘটনার দেড় বছর পর এই লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে।
তদুপরি, গবেষণায় এই সমস্যার পিছে মূল কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের উচ্চ স্তরের নারীরা বিষণ্নতা এবং উদ্বেগের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করে, যা শিক্ষা এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হওয়ার প্রভাবকে প্রকাশ করে।
অস্বাভাবিকভাবে, যাদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রয়েছে তারা মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়েছেন। এটি শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দেওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে না বরং স্বতঃস্ফূর্ত গর্ভপাত দ্বারা প্রভাবিত নারীদের জন্য ব্যাপক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদানের গুরুত্ব তুলে ধরে।
এটা হতাশাজনক যে সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের মধ্যে গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্যের যে ক্ষতিকর প্রভাবগুলি থাকতে পারে তা এখনো পর্যন্ত আড়ালে রয়ে গেছে। যদিও বিশ্বব্যাপী প্রাথমিকভাবে এই ধরনের ক্ষতির শারীরবৃত্তীয় দিকগুলির উপর গুরুত্ব দিয়েছে, এই গবেষণাটি এমন সব সমস্যা তুলে এনেছে যা নারীরা নীরবে সহ্য করে আসছে।
এই জরুরী সমস্যা সমাধানের জন্য, গর্ভপাত-পরবর্তী পরিচর্যা পরিষেবাগুলিকে বস্তির নারীদের জন্য সহজলভ্য করে তুলতে হবে। যেসব নারীরা কষ্টকর অভিজ্ঞতার ফলে মানসিক আঘাত পেয়েছেন তাদের সুবিধার জন্য একসাথে একটি আদর্শ সেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
সেইসাথে, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সহনশীলতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহরের বস্তিতে বসবাসরত নারীদের শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা করতে হবে, যাতে তারা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তদুপরি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ তাদের জীবনযাপনের মান উন্নত করতে পারে, তাদের আর্থিক স্বাধীনতা এবং জীবনের উদ্দেশ্য প্রদান করতে পারে।
এই গবেষনায় পাওয়া ফলাফলগুলি নীতিনির্ধারক, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের জন্য একটি জাগরণী বার্তা হিসাবে কাজ করা উচিত। আমাদের অবশ্যই সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত নারীরা যে নীরব সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যান সেগুলো জানতে হবে এবং তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয় চাহিদা মেটাতে পারে এমন একটি সেবা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এটি করার মাধ্যমে, আমরা আরো সহানুভূতিশীল সমাজের পথ প্রশস্ত করতে পারি।
সূত্র: বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড